সূরা আল-কদর

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - কুরআন ও হাদিস শিক্ষা | | NCTB BOOK
13
13

সূরা আল-কদর ( سُوْرَةُ الْقَدْرِ )

শানে নুযুল 

কুরআন মাজিদের শ্রেষ্ঠত্ব, মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব বোঝানোই এ সূরা নাযিলের উদ্দেশ্য। ইবন জারির (রহ.) এ সূরার শানে নুযুলের ব্যাপারে একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন যে, বনি ইসরাইলের এক ব্যক্তি সারা রাত ইবাদাতে নিয়োজিত থাকতেন। আর সকাল হলেই আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়ে যেতেন এবং সারা দিন জিহাদে লিপ্ত থাকতেন। তিনি এভাবে এক হাজার মাস আল্লাহর ইবাদাতে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। তখন সাহাবিগণ বিস্মিত হয়ে ভাবলেন, আমাদের হায়াত খুবই সংক্ষিপ্ত অথচ পূর্ববর্তী উম্মতগণ দীর্ঘদিন জীবিত থাকতেন। বেশি বেশি ইবাদাত করার সুযোগ পেতেন। ফলে আমরা কখনই ইবাদাতের সাওয়াবের ক্ষেত্রে তাদের সমান হতে পারব না। সাহাবিগণের এমন আফসোসের পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ সূরা কদর নাযিল করে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেন। সাহাবিগণ বনি ইসরাইলের উম্মতদের ইবাদাত-বন্দেগির কথা শুনে স্তম্ভিত হয়েছিলেন। মহান আল্লাহ এর চেয়েও উত্তম বস্তু এ সূরার মাধ্যমে তাদের দান করেছেন।

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

 

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে।

إِنَّا أَنْزَلْتُهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِة

 

১. নিশ্চয়ই আমি এটি (আল-কুরআন) অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রাতে।

وَمَا أَدْرَكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ

 

২. আর আপনি কি জানেন এ মহিমান্বিত রাত কী?

لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ  

 

৩. মহিমান্বিত রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।

تَنَزَّلُ الْمَلْكَةُ وَالرُّوْحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ :

 

৪. সে রাতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রুহ (জিবরাইল ফেরেশতা) তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে অবতীর্ণ হয়।

سَلْمٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ

 

৫. সে রাতে উষা উদয় হওয়া পর্যন্ত শান্তিই শান্তি (বিরাজ করে)।

ব্যাখ্যা 

এ সূরায় কুরআন মাজিদ নাযিলের কথা এবং সে রাতের মাহাত্ম্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কুরআন নাযিল করা হয়েছে লাইলাতুল কদরে। লাইলাতুল কদরে কুরআন নাযিলের অর্থ, এ রাতে সমস্ত কুরআন এক সঙ্গে নাযিল হয়েছে। লাওহে মাহফুয থেকে সম্পূর্ণ কুরআন প্রথম আসমানের বায়তুল ইযযাহ নামক স্থানে নাযিল করা হয়েছিল। লাইলাতুল কদর অত্যন্ত মহিমান্বিত রাত। এ রাতের মর্যাদা এক হাজার মাসের চেয়েও বেশি। এই একটি রাতের ইবাদাত একাধারে তিরাশি বছর চার মাস ইবাদাত করার চেয়েও উত্তম। এ রাতে হযরত জিবরাইল (আ.) অন্যান্য ফেরেশতাগণসহ মহান আল্লাহর অনুমতিক্রমে রহমত, বরকত ও শান্তির বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। এ রাতে ফজর হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত পরিপূর্ণ শান্তি বিরাজ করে।

 

শিক্ষা 

এ সূরা থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই:

১. কুরআন মাজিদ মহান আল্লাহর কালাম বা বাণী। এটি তিনি লাইলাতুল কদরে নাযিল করেছেন। 

২. লাইলাতুল কদর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ রাত। তবে লাইলাতুল কদর কোনটি এ সম্পর্কে হাদিসের ইঙ্গিত হলো এই যে, রমযান মাসের শেষ দশকের কোনো এক বেজোড় রাতই লাইলাতুল কদর। আবার বিশেষজ্ঞ আলিমগণের অনেকেই রমযান মাসের ২৭তম রাতকে অর্থাৎ ২৬তম দিবাগত রাতকে লাইলাতুল কদর বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। 

৩. এ রাতের ইবাদাত হাজার মাসের ইবাদাতের চেয়ে উত্তম। 

৪. এ রাতে জিরাঈল (আ.)-এর নেতৃত্বে ফেরেশতাগণ শান্তি ও কল্যাণ নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করেন। 

৫. এ রাতে ফজর উদিত হওয়ার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত শান্তি ও রহমত বর্ষিত হয়। ৬. লাইলাতুল কদরে কুরআন মাজিদ নাযিলের কারণেই তা এত মর্যাদার অধিকারী হয়েছে।

 

আমরা বেশি বেশি নফল ইবাদাত বন্দেগির মাধ্যমে যথাযথভাবে লাইলাতুল কদর উদযাপন করব। এ রাতের সামান্য সময়ও ইবাদাত না করে অতিবাহিত করব না। তাহলেই আমরা হাজার মাস অপেক্ষা বেশি ইবাদাতের সাওয়াব অর্জন করতে পারব।

 

দলগত কাজ 

'সুরা কদর' এর শিক্ষা অনুযায়ী কদরের রাতে আমাদের কী করা উচিত 

(উল্লিখিত শিরোনামের আলোকে সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক উপস্থাপন করো।)

 

 

Content added By
Content updated By
Promotion